‘৯ মাস যুদ্ধ করে এখন আমি ‘রাজাকার’, এ লজ্জা রাখবো কোথায়?’

ঢাকা : গোলাম আরিফ টিপু একজন বাংলাদেশি আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক হিসেবে পরিচিত। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন এই ব্যক্তিত্ব মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজশাহীতে এই টিপুর নেতৃত্বেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য সরকার চলতি বছর (২০১৯) তাকে একুশে পদক প্রদান করে।
কিন্তু সরকারের করা ‘রাজাকারের’ তালিকায় উঠেছে সেই সেই গোলাম আরিফ টিপুর নাম। এ নিয়ে সারা দেশে যখন প্রবল সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় বইছে তখন বিশিষ্ট এই আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা নিজেও বিষয়টি নিয়ে দারুণ মর্মাহত।
স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৮ বছর পর গেল রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেখানে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আর তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেখানো হয় অনুর্ধ্ব ২ লাখ ১০ হাজার।
এরপরই রাজশাহী বিভাগের রাজাকারদের তালিকায় ৬০৬ নম্বরে দেখা যায় গোলাম আরিফ টিপুর নাম। এ নিয়ে সর্ব মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
এ নিয়ে খুবই বিব্রত গোলাম আরিফ টিপু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত, বিস্মিত ও হতবাক। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কতটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মধ্যে এ কাজটি করেছে তা তালিকা দেখলেই বোঝা যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে না। যে কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। যেভাবে আমার নাম দেয়া হয়েছে, সেভাবে তো আমাকে পাওয়া কথা না কোনোভাবেই। নয় মাস যুদ্ধ করেও যদি রাজাকারের তালিকায় নাম উঠে তাহলে এ লজ্জা রাখবো কোথায়?’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অন্যভাবে সমাধান না হলে, আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সারা জীবন বাঙালি, দেশের জন্য লড়াই করেছি। আর আজ এই অভিযোগ পেলাম। এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।’
এদিকে তালিকায় ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘এমন ভুলের দায় অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। একাত্তরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। রাজাকারের তালিকা নতুনভাবে করা হয়নি। ভুল-ভ্রান্তি অনেক বেশি হলে এ তালিকা প্রত্যাহার করা হবে।’
শুধু গোলাম আরিফ টিপুই নন- বরিশালের একজন গেজেটেড ও নিয়মিত ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর নামও এসেছে রাজাকারের তালিকায়। তার মেয়ে বাসদ নেত্রী ডা. মণীষা চক্রবর্তী ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আজীবন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বরগুনার মজিবুল হকের নামও এসেছে রাজাকারের তালিকায়। অথচ একাত্তরে এই মজিবুল হক ছিলেন পাথরঘাটা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম যদি রাজাকারের তালিকায় আসতে পারে তবে একাত্তরের রাজাকার-আল বদর-আল শামসদের নামও তো চলে আসতে পারে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়!

Comments

Popular posts from this blog

‘না বুঝে লাইক-শেয়ার দিলেই গ্রেপ্তার’

আনসারীর জানাজা নিয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস, যুবক গ্রেফতার

‘১৬ জনের ফাঁসি, আ.লীগ নেতাও আছেন’